সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে মনোহরগঞ্জের সেই দরিদ্র অটো রিক্সা চালকের জমজ দুই ছেলে

আকবর হোসেন।।

‘আধাঁর ঘরে চাঁদের আলো’ এই কথাটির সাথে মিলে যায় বাস্তবতার অনেক কিছু। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেই অটো রিক্সা চালক বিল্লাল মিয়ার জমজ দুই ছেলে আরিফ হোসেন ও শরীফ হোসেনের কথা। তারা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকা, কুমিল্লার জনপ্রিয় দৈনিক রুপসী বাংলা পত্রিকাসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। তখন নিউজ করার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সহযোগীতা করা হয়েছে এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, পঞ্চগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি শিল্পপতি শাহজাহান ভুঁইয়া, নাথেরপেটুয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাজির আহামেদ চৌধুরী, লাকসাম বার্তা পত্রিকার মালিক শহীদ উল্লাহ ভুঁইয়াসহ আরো অনেক মানবতার সেবকরা তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। মনোহরগঞ্জের তৎকালীন নির্বাহী অফিসার ও মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মাষ্টার আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী তাদেরকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। প্রতিদিনের সংবাদ, দ্যা ডেইলি ট্রাইবুনাল ও দৈনিক রুপসী বাংলা পত্রিকার প্রতিনিধি আকবর হোসেন মিষ্টি নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। শত শত মানুষ তাদেরকে দিয়েছেন পুরস্কার। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর শুরু হয় তাদের আরেক জীবন। তাদের দুই ভাইকে ভর্তি করা হয় কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজে। সেখানে গিয়েও সাংবাদিক আকবর হোসেন নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখেন এবং তাদের অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখেন। তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেন। এইচএসসির ফরম ফিলাপের সময় আবারও সহযোগীতা করেছেন ইঞ্জিনিয়ার নাজির আহামেদ চৌধুরী। খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে রিক্সা চালিয়ে ২ জমজ ছেলেকে কুমিল্লায় হোস্টেলে রেখে পড়ালেখা করিয়েছেন অসহায় রিক্সা চালক বিল্লাল মিয়া। তার জমজ দুই ছেলে আরিফ ও শরীফ ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় আবারো বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। পরে তাদেরকে রেটিনা কুমিল্লা শাখায় মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি করানো হয়। গত ২ এপ্রিল সারাদেশে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় ১ লক্ষ ২২ হাজার শিক্ষার্থীর সাথে অংশগ্রহণ করে অসহায় রিক্সা চালক বিল্লাল মিয়ার দুই ছেলে আরিফ ও শরীফ। পরে ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ফলাফলে জাতীয় মেধায় আরিফ হোসেন ৮২২ তম হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পেয়েছে এবং শরীফ হোসেন ১১৮৬ তম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পেয়েছে। তাদের এই সাফল্যে সবাই খুশি। খুশি তাদের বাবা ও মা। ছেলেদের সাফল্যের কথা শুনে আনন্দে বিল্লাল মিয়া কান্না করেছেন। তাকে সবাই শান্তনা দিয়েছে। আশ্বাস দিয়েছেন সহযোগীতা করার। আরিফ ও শরীফের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর শুনে কুমিল্লার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান গতকাল বুধবার মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানার মাধ্যমে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এছাড়াও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজনিন উম্মে জাকিয়া তাদেরকে আর্থিক সহযোগীতা করার ঘোষণা দেন। আরিফ ও শরীফের বাড়ি মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামে। তারা ১ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে আশিয়াদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরে কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আরিফের বাবা বিল্লাল মিয়া জানান, আমি গরীব মানুষ অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাইতেছি। আমার ছেলেরা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার দুইটি ছেলেকে সহযোগীতা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদেরকে অনুরোধ করছি। এছাড়াও আমি সকলের নিকট আমার সন্তানদের জন্য দোয়া কামনা করছি। আরিফ ও শরীফ জানায়, আমরা ভালোভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। আমাদের বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লেখাপড়া করাইতেছে। তাই আমাদের ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের ধনী ব্যক্তিদের সহযোগীতা কামনা করছি।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!